প্রতিবেদক: Nayan Dewanji | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 9 Jun 2025, 11:09 PM
বাকহীন জীবনের ভার কতটা ভারী হতে পারে, তা কেবল বোবা কান্না বুঝে। ভাষার অভাবে যে বেদনা বোবা হৃদয়ে জমে থাকে, তা হয়তো কখনও শব্দে ফোটে না—ফুটে ওঠে আচমকা বিষপানে, ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজেরই রক্তদের চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে। এমনই এক মর্মান্তিক দৃশ্যের জন্ম দিল কুমিল্লার তিতাস উপজেলার তুলাকান্দি গ্রামের এক নিঃশব্দ সকাল।
সোমবার, ৯ জুন। সকাল ৭টার দিকে এক অসহনীয় বাস্তবতার ভার বইতে না পেরে নিজ কন্যা দুই শিশুকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষ পান করেন ৩২ বছর বয়সী বাকপ্রতিবন্ধি পিতা মনু মিয়া। শিশুদুটি—দশ বছর বয়সী মনিরা আক্তার ও ছয় বছরের আল ফাতেহা—কোনো শব্দ করে কান্না জানত না। জানত না, কীভাবে বলবে, "আমরা বাঁচতে চাই।" সেই বোবা চাওয়ারও শেষ হলো , বিষাক্ত এক সকালবেলায়।
মনু মিয়া নিজেই বোবা। তাঁর দুই কন্যাও জন্ম থেকেই বাকপ্রতিবন্ধি। পরিবারের একমাত্র জীবিকা নির্বাহকারী মনু, যিনি ইশারায় বোঝান তাঁর দুঃখ, দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বলে জানান তাঁর বাবা মুকবুল হোসেন।
মুকবুল হোসেন বলেন, “ছেলে আমার বোবা, নাতনিরাও বোবা। মনু প্রায়ই ইশারায় বলতো, মেয়ে দুটোর বিয়ে কীভাবে দেবে? সমাজে অনেকেই মশকরা করত, বলতো—‘তোর ঘরে তো বোবার সংসার, বিয়ের পাত্র পাবি কোথায়?’” এই কথাগুলোর ভার হয়তো শব্দহীন ছিল, কিন্তু মনু মিয়ার হৃদয়ে তার প্রতিধ্বনি ছিল পাহাড়সম।
সেই ভেতরে জমে থাকা অভিমান এক ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্তে রূপ নেয়। সকালবেলা ঘরের দরজা বন্ধ করে মনু মিয়া প্রথমে দুই শিশুকন্যাকে বিষ খাওয়ান। তারপর নিজেও বিষপান করেন। চিৎকার বা আর্তনাদ কেউ শোনেনি, কারণ এই ঘরে কান্নারও ছিল না কোনো ভাষা।
পরে স্থানীয়রা দরজা ভেঙে উদ্ধার করে তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। শিশুদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মনু মিয়াকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সরফরাজ আহমেদ খান বলেন, “শিশুদের মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। পিতার অবস্থাও গুরুতর। শুধু চিকিৎসা নয়, আমাদের সমাজে কীটনাশক বা বিষ জাতীয় দ্রব্যের অবাধ বিক্রি যে কত বড় বিপদের কারণ হতে পারে, সেটিও ভাবার সময় এসেছে। আমি মনে করি, এইসব বিষাক্ত দ্রব্য সহজলভ্য হওয়াটাই এক বড় সামাজিক ব্যর্থতা।”
তিতাস থানার ওসি শহিদ উল্লাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “তিনজনই কীটনাশক পান করেছেন। দুই শিশু মারা গেছে, বাবা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এটি নিঃসন্দেহে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা।”
তবে এখানেই শেষ নয়—এই ঘটনা যেন সমাজের সেই বিবেককে জাগিয়ে তোলে, যে বিবেক মশকরা করে এক প্রতিবন্ধী পিতার বোবা সন্তানদের নিয়ে। যাদের হাসির ঠোঁটে লুকিয়ে থাকে অন্যের কান্নার উপহাস।
এই দুই বোবা শিশুর মৃত্যুর দায় কি শুধুই সেই বিষের? নাকি সেই সমাজও অংশীদার, যারা বোবা মানে ব্যর্থ, প্রতিবন্ধি মানে অপমান, আর মানুষ মানে কেবল ‘স্বাভাবিক’?
মনু মিয়া এখনও বেঁচে আছেন—চিকিৎসাধীন। হয়তো চিকিৎসকরা তাঁকে বাঁচিয়ে তুলবেন, কিন্তু তাঁর বুকের পাঁজরে জমে থাকা বোবা আর্তনাদ—তা কি আর ফিরে আসবে শব্দ হয়ে?
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
বজ্রকণ্ঠে বাজে ডাকে, কালো মেঘের তীর,বৃষ্টির ফোঁটা মাটির বুকে জাগায় প্রেম-নদীর।কদমফুলের গন্ধ মেশে শিশ...
জেলা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোয় এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়টি থানার মধ্যে পাঁচ থানার অ...
নিরব শিক্ষা অঙ্গন হঠাৎই অশান্ত। প্রিয় শিক্ষককে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে কুমিল্লা মডার্ন হা...
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবার অব্যবস্থাপনা ও পরিচালক ডা. মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির...
দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা ও আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪ জন প্রধান শিক্ষক ফিরে পে...
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনের (১৮তম) চূড়ান্ত ফলাফলে কারিগরি ত্রুটির সংশোধন করে নতুন করে ৬০ হাজার ৬৩৪ জন...
The Weekly Swadesh Journal স্বদেশ জার্নাল