প্রতিবেদক: Khazina akther | ক্যাটেগরি: শিল্প ও সাহিত্য | প্রকাশ: 14 Jun 2025, 4:38 PM


ভোরের আলো তখনো পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েনি। শিউলি গাছের নিচে শিশিরে ভেজা মাটি, আর এক পাশে পড়ে আছে কিছু ঝরা ফুল—সাদা পাঁপড়ির ভেতর কমলা মায়া। ঠিক সেখানেই বসে ছিল ইয়ানা, এক চিমটি ঘুম আর এক সাগর স্বপ্ন চোখে নিয়ে।
সে প্রতিদিন ভোরে উঠে এই শিউলি গাছটার নিচে আসে। কেউ জানে না কেন, কেউ বোঝেও না। কিন্তু ইয়ানা জানে, এই গাছের একটা ডালে একদিন একটি চিঠি বাঁধা ছিল—হাতের লেখা চেনা, শব্দগুলো খুব নিজের মতো, আর তার নিচে লেখা ছিল—"তুমি আসলে আমি ঝরে যাবো না। আমি হয়ে থাকবো তোমার প্রিয় শিউলি গন্ধে।"চিঠিটা আজ আর নেই। কিন্তু সেই গন্ধ… আজও বাতাসে ভাসে।ঠিক তখনই রাস্তার ধারে এক সাইকেল থামে। এক পোস্টম্যান, হয়তো নতুন কেউ, চোখে নরম চাহনি, হাতে একটা চিঠি। তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বললেন,
— "ইয়ানা রহমান ?"
ইয়ানার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে যায়। তার নাম, অনেক বছর পর কেউ ডাকল এত যত্নে।চিঠির খামটা কুয়াশার মতো ঠান্ডা ছিল, কিন্তু ভিতরের কাগজে ছিল সেই একই গন্ধ—শিউলির গন্ধে ভরা ।
— কাঁপা হাতে লেখা চিঠির প্রথম লাইনটা ছিলো "তুমি আসো নি বলে।অপেক্ষার প্রহর গুনে গুনে শেষে রোদ্দুর তাপে ঝরতেই হলো আমাকে।আমি শিউলি, মনে রেখো।তোমার প্রিয় নরম সকালটা আমি হয়েই ফিরি ঝরা পাতায়,আর তুমি হাঁটো বেখেয়ালে—আমায় না দেখে...তবু থাকি... তোমারই পাশে..."চিঠির শেষে কোনো নাম নেই।
শুধু এক কোণে শুকনো একটা শিউলি ফুল সেঁটে আছে—একটু পেঁচানো, তবু গন্ধটুকু এখনো থেকে গেছে।ইয়ানা চোখ বুঁজে গন্ধটা নেয়।হয়তো এটা সে নয়,হয়তো তারই মনের এক অংশ লিখেছে নিজেকেই চিঠি।আর তখনই গাছের ওপর থেকে একটা বড় প্রজাপতি নেমে এসে তার কাঁধে বসে...
নীরবে বলে যায়—
"আমি আসিনি বলেই কি তুমি আর থাকবে না?"ইয়ানার কাঁপা হাতে লেখা চিঠির প্রথম লাইন ছিলো -
"আমি আসিনি বলেই কি তুমি আর থাকবে না?শুধু একফোঁটা চোখের জল ধীরে গড়িয়ে পড়ে চিঠির কোণে, যেখানে শিউলি ফুলটা সেঁটে ছিল।ফুলটা ভিজে যায়, কিন্তু গন্ধটা তবু মুছে যায় না।ইয়ানা চিঠিটা দুই হাতে ধরে বুকের মধ্যে এমন আঁকড়ে রাখে, যেন হারিয়ে গেলে নিজেকেই হারাবে।তার ঠোঁটে কোনো শব্দ নেই, শুধু চোখ থেকে টুপটাপ ভেসে আসে সব না-বলা কথা।বাতাস একবার হালকা করে কাঁপে, যেন কেউ তার কানপাশে ফিসফিসিয়ে বলে—
"তোমার অপেক্ষা বৃথা ছিল না, আমি এসেছিলাম...তোমার হৃদয়ে, প্রতিদিন... শিউলি হয়ে।"ইয়ানার বুকের ভেতরে যেন এক হালকা ঝড় বয়ে যায়।সে জানে, সে কাউকে হারায়নি—সে কেবল সময়ের এক অনুচ্চারিত প্রান্তে দাঁড়িয়ে, অনুভব করছিল সেই ভালোবাসাকে—যা কখনও মুখে বলা হয়নি, তবু প্রতিটি ঝরা শিউলির মতো পড়ে থেকেছে তার অপেক্ষায়!শিউলির জন্য ইয়ানার অপেক্ষা যেমন করে মহীরুপে সজ্জিত হয় —সকাল নামার আগেই জেগে উঠে ইয়ানা।শিউলি যদি ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় গা ভেজায় শিশিরের মতো,তার সবটুকু ঘ্রাণ সাজিয়ে রাখে বাতাসে—যদি অন্য কেউ এসে বলে,"এই তো, আমার সঙ্গে চলো ...প্রথম প্রহরে সে চেয়ে থাকে পূর্ব দিগন্তে—সূর্য ওঠে, আলো ছড়ায় চারপাশে,কিন্তু ইয়ানার চোখে শুধু সেই একটি মুখ।জানি না সে কবে আসবে, তবু এই ভাবনাটুকু—ইয়ানার বুকের ভিতর নিঃশব্দে হেঁটে যায়।দ্বিতীয় প্রহরে, যখন পাতার ফাঁক দিয়ে রোদ আসে শিউলি তখন শুকিয়ে যাওয়া একটা বৃষ্টির অপেক্ষা করে।ভাবতে থাকে—হয়তো আজ, ঠিক আজই কেউ আসবে,বসে পড়বে আমার ছায়ায়,আর বলবে, "আমার বড় দেরি হয়ে গেল রে .."বিকেলের রোদে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সে।তবু গাছের নিচে পড়ে থাকা প্রতিটি ফুলশুধু তার অপেক্ষার ভাষ্য।ঝরে পড়ে, তবু বুক চিরে বলেই যায়—
"তোমাকে খুঁজেছি প্রতিটি ফোঁটা আলোয়..."শেষ প্রহরে, রাতে, চাঁদের আলো এসে গায়ে পড়ে শিউলি তখন চুপচাপ…তার চোখে ঘুম নেই, তার পাতায় শব্দ নেই।শুধু হাওয়া একটু দুলে উঠলেই, সে ভাবে "এই বুঝি তুমি এলে..."আর এভাবেই. ...প্রহর গুনতে গুনতে,জন্ম পার হয়ে যায়।
"শিউলি তবু একই থাকে—একজন অপেক্ষার নাম,ভালোবাসার নিঃশব্দ প্রহর।"
— খাজিনা খাজি, কবিও সংগঠক।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর

"রূপকথার স্হান"— খাজিনা খাজি
বজ্রকণ্ঠে বাজে ডাকে, কালো মেঘের তীর,বৃষ্টির ফোঁটা মাটির বুকে জাগায় প্রেম-নদীর।কদমফুলের গন্ধ মেশে শিশ...

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের একযোগে বদলি পাঁচ থানার ওসি সহ ৮ পরিদ...
জেলা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোয় এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়টি থানার মধ্যে পাঁচ থানার অ...

শিক্ষকের গ্রেফতারে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা: কুমিল্লা মডার্ন হাই...
নিরব শিক্ষা অঙ্গন হঠাৎই অশান্ত। প্রিয় শিক্ষককে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে কুমিল্লা মডার্ন হা...

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে সেবা সংকট ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ‘কুমি...
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবার অব্যবস্থাপনা ও পরিচালক ডা. মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির...

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৪ প্রধান শিক্ষক পেলেন দীর্ঘপ্রত্যাশিত ব...
দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা ও আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪ জন প্রধান শিক্ষক ফিরে পে...

অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল সংশোধন: উত্তীর্ণ সংখ্যা...
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনের (১৮তম) চূড়ান্ত ফলাফলে কারিগরি ত্রুটির সংশোধন করে নতুন করে ৬০ হাজার ৬৩৪ জন...
