বহুল আলোচিত নির্বাচন কমিশন বিতর্কে নতুন উত্তাপ ছড়াল সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ কে এম নুরুল হুদার গ্রেফতারে। রোববার (২১ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরায় স্থানীয়দের হাতে আটক হওয়ার পর গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নুরুল হুদাকে একটি চলমান মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সোমবার (২৩ জুন) তাকে আদালতে হাজির করা হবে। বিএনপির অভিযোগ ও মামলা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সদ্য একটি মামলা দায়ের করেছে, যেখানে প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনকারী তিনজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ একাধিক নির্বাচন কমিশনার, সরকারি কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পদস্থ ব্যক্তিরা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা এ কে এম নুরুল হুদা ছাড়াও মামলায় নাম রয়েছে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরীসহ তৎকালীন পুলিশের আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, এনএসআই, ডিজিএফআই ও এসবি প্রধানদের। এছাড়া মামলার আবেদনে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ ও ২০২৪ সালের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও উল্লেখ করা হয়েছে। জনগণের প্রতিক্রিয়া উত্তরার ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুলেছে। গলায় জুতার মালা পরানো এবং জনতার হাতে সাবেক একজন সিইসির আটক হওয়ার দৃশ্য বিরল এবং তা দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনারই বহিঃপ্রকাশ। স্থানীয়রা বলছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া নির্বাচন ও ভোটের নামে প্রহসনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন। প্রশাসনের অবস্থান উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “সাবেক সিইসি নুরুল হুদার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।” ঢাকা মহানগর ডিবি কার্যালয়ে বর্তমানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ নুরুল হুদার গ্রেফতার শুধু একটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ নয়, বরং এটি দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন মাত্রা যোগ করল। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে জনমনে যে প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে, তা এখন সরাসরি আইন ও আদালতের পথে গড়াচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে দেশে যে আলোচনা বহুদিন ধরে চলে আসছে, এ গ্রেফতার সেই বিতর্ককে আবারো কেন্দ্রে এনেছে।