
প্রতিবেদক: Nayan Dewanji | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 16 Jun 2025, 10:44 AM

জুনের শেষ ভাগে বাতাসে ঈদের ঘ্রাণ তখনো শুকায়নি। কিন্তু জগমোহনপুর গ্রামের আকাশটা রবিবার সকালেই হঠাৎ রঙ হারিয়ে ফেলল। তালগাছের ডালে এক যুবকের দেহ যখন দুলছিল, তখন নিস্তব্ধতার মাঝে শোক যেন থমকে দাঁড়িয়ে কান্না শুনছিলো।
আজিজুল হক রবিন—গড়পড়তা এক যুবক। পাড়ার মাঠে যার পা ছিলো, কারখানার ঘড়ির কাঁটায় যাঁর ঘাম পড়তো। যিনি ছিলেন বাবা আবুল খায়েরের একরোখা ছেলে, আর ছয় বছর বয়সী কন্যা জান্নাত আক্তারের চোখে ‘সুপারহিরো’। কিন্তু কোনো সুপারহিরোই নিজের হৃদয়ের ভাঙা শব্দে চাপা কান্না আটকে রাখতে পারে না, যখন স্ত্রী নাছিমা আক্তার আট বছরের সংসার থেকে চুপচাপ চলে যায়।
তাদের মধ্যে প্রেম ছিল না—এমন নয়। কিন্তু ‘সন্দেহ’ নামের সেই বিষধর আগুনে প্রতিদিন পুড়েছে সংসার। একদিন সন্দেহ জিতেছে, ভালোবাসা হেরে গেছে। ছয় মাস আগে নাছিমা একমাত্র সন্তান রেখে বাবার ঘরে চলে যান। রবিন বহুবার ফেরানোর চেষ্টা করেছেন, সংসারের ছেঁড়া পাতা আবার গেঁথে তোলার প্রয়াস নিয়েছেন। কিন্তু সেই পাতা এসে ছেঁড়েই ফিরল।
দুই মাস আগে নাছিমা পাঠিয়েছিলেন সেই চিরকুট—ডিভোর্স লেটার। একটা লাল খামে মোড়া নিঃশব্দ ঝড়। পরিবার তাকে জানানোর সাহস করেনি। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! ঈদের ছুটি শেষে গার্মেন্টসে ফেরার আগে পরিচয়পত্র খুঁজতে গিয়ে লাল খামটা নিজেই খুঁজে পেল রবিন। চোখে পড়ল তার নাম, তার ঠিকানা, আর এক অদৃশ্য সীমানা টেনে দেওয়া দাম্পত্য সম্পর্কের সমাপ্তি।
তারপর? তারপর সে আর কিছু বলেনি। মুখ গোমড়া করে হেঁটে বেড়িয়েছে উঠোনে, কখনও বসে থেকেছে নিঃশব্দে। একা একা তার চোখে যেন কুয়াশা নেমে এসেছিল। শনিবার বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল সে। কেউ ভাবেনি রবিন এমন কিছু করতে পারে।
রবিবার সকালে বাড়ির পাশের গাছে দুলে ওঠে এক নিথর দেহ। পাখিরা তখনও গাইছিল, কিন্তু গানের তালে তাল মেলাতে পারছিল না কেউ। জীবন থেমে গিয়েছিল সেই ছেলেটির, যিনি ডিভোর্স লেটার হাতে পেয়েই সব কিছু ভুলে গিয়েছিলেন—জান্নাত, বাবা-মা, পৃথিবীর আলো।
পুলিশ লাশ নামায়, ময়নাতদন্তের কথা বলে, কাগজে লিখে নেয় আত্মহত্যা। কিন্তু কীভাবে বোঝাবে কেউ, একটি লাল খামে মোড়া কাগজও কারো কাছে মৃত্যুর সমান হতে পারে?
আজিজুল হক রবিনের গল্প শেষ। কিন্তু তার রেখে যাওয়া প্রশ্নগুলো ভেসে থাকে বাতাসে—ভালোবাসা কি সন্দেহে টেকে না? সম্পর্ক কি শুধুই দস্তখতের জাদুতে গড়া? এবং একজন মানুষ—যে চুপচাপ সব সহ্য করে, তাকেও কি সময়মতো জড়িয়ে ধরা যেতো না?
একটি গাছের ডালে আজ শুধু এক শরীর ঝুলছিল না। ঝুলছিল একটি ভাঙা সংসার, একটি না বলা কষ্ট, একটি মেয়ে সন্তানের অনাগত প্রশ্ন—"আমার বাবা কোথায়?"
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর

জীবন বৃক্ষ........ ইসরাত মুনতাহা
জীবন নামক বৃক্ষটা,অকালে হারিয়েছে তার স্বপ্নটা।বয়সের সংখ্যা বাড়ছে যত,জীবন বৃক্ষ নড়বড়ে হচ্ছে তত।দিন দি...

প্রাণহীন শিকড়.........ইসরাত মুনতাহা
যখনই নিজের অস্তিত্ব খুঁজি,নিজের সাথে নিজেকে তখনই ধরতে হয় বাজি।জীবনের ধারায় থাকা প্রতিটি হতাশা, ...

বান্দরবানে সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক পিসিএনপি’র
পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি–১৯০০ ও রাজার সনদ বাতিলসহ ৮ দফা দাবিতে আগামী সোমবার (১৪ অক্টোবর) বান্দরবা...

বৃষ্টি ভেজা মন ----- ইসরাত মুনতাহা
অসময়ের বৃষ্টি, মনে করলো নতুন বাসনার সৃষ্টি। বৃষ্টির বাড়ন্ত ফোঁটায় ফোঁটায়, অদৃষ্ট মায়া...

ভোরের ওই শিশিরে ...মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন
কেটে যায় মোর দিন-রাত আধাঁর এক কুটিরে &nb...

কুমিল্লা ময়নামতি কালী মন্দিরে শ্যামাপূজা ও মহানাম সংকীর্তন ২...
তাপস চন্দ্র সরকার, ।। আসছে ২০ ও ২১ অক্টোবর সোম ও মঙ্গলবার দুদিন ব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান সূচীর মধ্যদি...

কুমিল্লা পলিটেনিক ইন্সটিটিউট আর্ন্তজাতিক শান্তি দিবস উদযাপন
নিজস্ব প্রতিবেদককুমিল্লা পলিটেনিক ইন্সটিটিউট রোভার স্কাউট গ্রæপের আয়োজনে আর্ন্তজাতিক শান্তি দিবস উদয...

প্রথমবারের মতো কুমিল্লায় মহালয়া উৎসবে হাজারো ভক্ত-শ্রোতার সম...
তাপস চন্দ্র সরকার, কুমিল্লা থেকে।। বিপুল উৎসাহউদ্দীপনায় আনন্দঘন পরিবেশে কুমিল্লা ত্রিশূল গীতা শিক্ষা...

শুভ মহালয়া আজ
তাপস চন্দ্র সরকার, কুমিল্লা।। আজ ২১ সেপ্টেম্বর রোববার বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্...

কুমিল্লায় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে সকল পূজা কমিটির সাথে মতব...
তাপস চন্দ্র সরকার।। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে...

মোহামেডানকে হারিয়ে মওসুম শুরু বসুন্ধরা কিংসের
তাপস চন্দ্র সরকার।। ফুটেজ ইনজেস্টে ঘরোয়া মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট বসুন্ধরা গ্রুপ চ্যালেঞ্জ কাপ...

দূর্গোৎসব উদযাপন উপলক্ষে মনোহরগঞ্জ বুড়া কালীবাড়িতে প্রতিযোগি...
তাপস চন্দ্র সরকার, কুমিল্লা।।আসছে ২৮ সেপ্টেম্বর বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শ্...
