প্রতিবেদক: Nayan Dewanji | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 9 Jun 2025, 1:18 AM
ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই স্বজনদের সঙ্গে কাটানো অমলিন সময়। কোরবানির ব্যস্ততা শেষ হতেই ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে কুমিল্লার ঐতিহাসিক ও বিনোদনকেন্দ্রিক পর্যটনস্থলগুলো হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত এক আনন্দলোক। শহর ছাড়িয়ে গ্রাম, তরুণ থেকে বৃদ্ধ, শিশু থেকে গৃহিণী—সবাই ছুটে গেছেন একটু প্রকৃতি, একটু ইতিহাস, আর অনেকখানি আনন্দের খোঁজে।
শহর ও শহরতলির দৃষ্টিনন্দন স্পটগুলোর মধ্যে কোটবাড়ি ছিল সবচেয়ে জনসমাগমপূর্ণ। সকাল থেকে রাত অবধি ঢল নেমেছে পর্যটকদের। কোটবাড়ির সবুজ টিলায় বসে কেউ ঈদের খাবার ভাগাভাগি করেছেন পরিবারের সঙ্গে, কেউ আবার সেলফি তুলেছেন প্রিয়জনদের নিয়ে। কেউ পাহাড়ি পথ ধরে হেঁটে হেঁটে খুঁজেছেন নিঃশব্দ শান্তি, আবার কেউ গান গেয়ে, নাচে-আড্ডায় মাতিয়ে তুলেছেন সবার মন।
প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী নব শালবন বিহার এবং ময়নামতি জাদুঘর ঈদের ছুটিতে যেন ফিরে পেয়েছে তার হারানো কোলাহল। বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শনের সামনে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকেছে, আর বাবা-মা কিংবা শিক্ষক-পর্যটন গাইড তাঁদের বুঝিয়েছেন শত শত বছরের ইতিহাস।
ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক ও ব্লু ওয়াটার পার্ক ছিল শিশু-কিশোরদের স্বর্গরাজ্য। ঈদের নতুন জামা পরে এসে তারা মেতেছে নানা রকম রাইডে—কখনো জলে, কখনো রোলার কোস্টারে। হাসি আর চিৎকারে মুখরিত ছিল পুরো পার্ক এলাকা। শিশুর হাত ধরে বাবারা যখন রাইডে ওঠেন, তখন তাদের মধ্যেও যেন জেগে ওঠে লুকিয়ে থাকা শৈশব।
ধর্মসাগর দিঘী আর রূপসাগর ছিল প্রেমিক যুগল ও পরিবারের প্রিয় গন্তব্য। হালকা বাতাসে শাড়ির আঁচল ওড়াতে ওড়াতে মেয়েরা হাঁটছিলেন, শিশুরা দৌড়াচ্ছিল দিঘীর পাড়ে, আর ছেলেরা গাইছিল গান। কেউ কেউ এসেছেন মাছ ধরার ছিপ হাতে, কেউ সঙ্গে এনেছেন ঘর থেকে রান্না করা খাবার।
ঐতিহাসিক ও সযত্নে রক্ষিত ওয়ার সিমেট্রিতে ঈদের দিনেও এক ধরনের নীরব শ্রদ্ধা দেখা গেছে। ঘাসে ঘেরা সেই কবরস্থানে দাঁড়িয়ে অনেকে মাথা নিচু করে স্মরণ করেছেন যুদ্ধে শহীদ হওয়া সৈনিকদের, বিশেষ করে তরুণরা ইতিহাসের এই দিকটি ঘনিষ্ঠভাবে দেখতে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন।
লালমাই পাহাড় ও লেক ল্যান্ড ছিল বিশেষ আকর্ষণীয় একটি স্থান। পাহাড়ঘেরা নির্জনতায় বসে অনেকেই উপভোগ করেছেন প্রকৃতির গম্ভীর সৌন্দর্য। কেউ গিটার বাজিয়েছেন, কেউ কবিতা আবৃত্তি করেছেন, কেউ মেতে উঠেছেন পিকনিকের সুরে। তরুণদের অনেকেই ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থাও করেন।
গোমতী নদীর পাড়ে বিকেলের সময়টায় ছিল সবচেয়ে জমজমাট। নদীর ওপর নৌকাভ্রমণের পাশাপাশি অনেকেই নদীর পাড়ে ছবি তুলেছেন, ঘুড়ি উড়িয়েছেন। মৃদু বাতাসে নদীর ঢেউ আর মানুষের কণ্ঠে হাসির সুর মিলেমিশে তৈরি করেছিল এক অপার্থিব অনুভূতি।
এই ঈদের ছুটিতে কুমিল্লা জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো শুধু বিনোদনের নয়, হয়ে উঠেছে আবেগ আর সংস্কৃতির মিলনস্থল। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের টহলে ছিল নিরাপত্তার সুব্যবস্থা। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। ভিড় সামাল দিতে স্বেচ্ছাসেবীরাও কাজ করেছেন কয়েকটি বড় স্পটে।
সব মিলিয়ে এবারের ঈদ কুমিল্লাবাসীর জন্য নিয়ে এসেছে ভিন্ন স্বাদ, নতুন উপলব্ধি—পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর আনন্দের পাশাপাশি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রকৃতির সান্নিধ্যে এক ঈদের ছুটিকে সত্যিই করে তুলেছিল স্মরণীয়।
এই উৎসব কেবল বাহ্যিক আনন্দ নয়, এটি ছিল আত্মার প্রশান্তি, সম্পর্কের উষ্ণতা আর শেকড়ের টানে ফিরে আসার এক অপার উপলক্ষ। কুমিল্লার পর্যটন যেন ঈদের ছুটিতে নিজেই এক কবিতা হয়ে উঠেছিল—যার প্রতিটি ছত্রে ছিল মানুষের মুখর আনন্দ ও প্রকৃতির প্রশান্ত হাসি।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
বজ্রকণ্ঠে বাজে ডাকে, কালো মেঘের তীর,বৃষ্টির ফোঁটা মাটির বুকে জাগায় প্রেম-নদীর।কদমফুলের গন্ধ মেশে শিশ...
জেলা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোয় এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়টি থানার মধ্যে পাঁচ থানার অ...
নিরব শিক্ষা অঙ্গন হঠাৎই অশান্ত। প্রিয় শিক্ষককে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে কুমিল্লা মডার্ন হা...
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবার অব্যবস্থাপনা ও পরিচালক ডা. মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির...
দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা ও আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪ জন প্রধান শিক্ষক ফিরে পে...
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনের (১৮তম) চূড়ান্ত ফলাফলে কারিগরি ত্রুটির সংশোধন করে নতুন করে ৬০ হাজার ৬৩৪ জন...
The Weekly Swadesh Journal স্বদেশ জার্নাল