...
শিরোনাম
আশুরা অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সাহস ও সত্যের পথ দেখায়: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ⁜ নাসিরনগরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত, আহত ১৫ চাতলপাড়ে উল্টা ও মোল্লা গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বে উত্তাল এলাকা ⁜ চাঁদপুরে কচুর লতি তুলতে গিয়ে সাপের কামড়ে বৃদ্ধার মৃত্যু বর্ষায় সাপের উপদ্রব, বাড়ছে আতঙ্ক ও সচেতনতার দাবি ⁜ ‘মেঘ যতই ঘন হোক, সূর্যকে আটকানো যাবে না’ কুমিল্লায় জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানের হুঁশিয়ারি— ‘‘যেন-তেন নির্বাচন চাই না’’ ⁜ চৌদ্দগ্রামে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় নিহত ২, আহত চালক পলাতক ⁜ কুমিল্লায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা দাবিতে সরব মনিরুল হক চৌধুরী, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টার কাছে চিঠি ⁜ মুরাদনগরে মা-ছেলে-মেয়ে হত্যা: রাজধানী থেকে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার ৬ ⁜ চান্দিনা প্রেস ক্লাব নির্বাচন সম্পন্ন: সভাপতি রণবীর, সম্পাদক মাসুদ ⁜ ১০১তম জন্মবার্ষিকী গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি যাদু মিয়া তোমায় ⁜ রোটারেক্ট ক্লাব লালমাইয়ের ৫২৯তম মিটিং ও নতুন রোটা বর্ষের সূচনা: প্রথম নারী সভাপতির নেতৃত্বে প্রাণবন্ত আয়োজন ⁜ বরুড়ায় কাদবা তলাগ্রাম তারিণী চরন লাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে উদ্বোধনী র‍্যালি অনুষ্ঠিত ⁜ লাকসামে রথযাত্রার দিন করুণ দুর্ঘটনা: রথের নিচে পড়ে ১০ বছরের শিশুর মৃত্যু ⁜ জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে: এখনই চাই সমন্বিত ও কঠোর পদক্ষেপ ⁜ আশুরা: ত্যাগ ও শোকের মহিমান্বিত দিন ⁜ বাংলাদেশ-জাপান অংশীদারত্ব জোরদারে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান ⁜ সতর্ক সংকেতে ৮ জেলা, ৪ সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা জারি ⁜ চলতি মাসের ১৩ জুলাইয়ের পর প্রকাশিত হবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল, অপেক্ষায় ১৯ লাখ শিক্ষার্থী ⁜ মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তকে ভুল সংশোধনে উদ্যোগ, শিক্ষকদের প্রস্তাব চেয়েছে ঢাকা বোর্ড ⁜ কুমিল্লার মুরাদনগরে এগিয়ে আসেনি কেউ, কবর খুঁড়ছে গ্রাম পুলিশ ⁜ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ: তদন্তে চার সদস্যের কমিটি, অভিযুক্তদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ⁜
Author Photo

প্রতিবেদক: Nayan Dewanji | ক্যাটেগরি: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কৃতি সন্তান | প্রকাশ: 6 Jul 2025, 12:00 AM

১০১তম জন্মবার্ষিকী গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি যাদু মিয়া তোমায় News Image
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।।
 
জন্মালে মরতে হবে এটাই স্বাভাবিক এবং চিরসত্য। তবে এই মরণের মাঝে কিছু মরণ থাই পাহাড়ের চেয়ে ভারী বোধ হয়। জাতীয় নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মৃত্যু সে কথাটি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে অনেককেই। মানুষ মাত্রই দোষে এবং গুণে সমৃদ্ধ। কোন মানুষই বিতর্কের উর্দ্ধে থাকতে পারে না, থাকেও না। যাদু মিয়ার সম্পর্কেও বিতর্ক দীর্ঘসময়ের।
আমাদের রাষ্ট্রে এবং সমাজে রাজনৈতিক প্রশ্নের জটসমূহ যখন জটিল থেকে জটিল আকার ধারন করতে থাকে, যাদু মিয়া সম্পর্কিত বিতর্কও নতুন নতুন মাত্রা অর্জন করতে থাকে। রাজনীতিতে একটি অংশ তাঁকে একেবারে খারিজ করতে পারলে বেঁচে যান মনে হয়। আর অন্য অংশটি খুব বেশী স্মরণের প্রয়োজনও বোধ করে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যে দলটিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, নিজের দলের প্রতীক তুলে দিয়েছেন তাদের হয়তো মনেই নেই মশিউর রহমান যাদু মিয়া নামে কেউ জড়িত ছিলেন তাদের জন্মের বেদনার সাথে।
জীবন ও প্রাপ্তির পূর্ণতার মধ্যে দ্বন্ধ থাকে চিরকালই। তবে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে তা একই ভাবে দেখা যায় না। কারও কারও জীবনে প্রাপ্তি ও পূর্ণতার একসাথে সমন্বয় হয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে দেখা দেয়। যার জীবনে সেটা দেখা দেয় সাধারণ মানুষ সে জীবনকে ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে এবং স্মরণ করে। আমাদের কালে এমনই একজন মানুষ হচ্ছেন জাতীয় নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া।
যাদু মিয়া আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ১৯৭৯সালের ১২মার্চ, পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ৪৫ বছর। কিন্তু যে জীবনকে রেখে গেছেন অসংখ্য অনুসারী, অনুরাগী ও গুনমুগ্ধকরদের মাঝে-সে জীবনের মৃত্যু নাই। সে জীবন বেঁচে থাকে কালের যাত্রা পথে, মানুষের জীবন চলার পথের আলোক বর্তিকা হিসাবে। জীবনের যে পরিচয় যাদু মিয়া রেখে গেছেন তার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। পঞ্জিকার হিসাবে তা হয়েছে প্রায় চার দশক। নশ্বর মানুষের জন্য এ এক পরিপূর্ন জীবনই বটে-যদিও কখনো কখনো তা ঈর্ষনীয়।

১৯২৪ সালের ৯ জুলাই নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রজীবনেই গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তিনি বার্মা গিয়ে যুদ্ধাহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তেতাল্লিশ মহাদুর্ভিক্ষের সময় রংপুরের চরাঞ্চলে প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তার নামানুসারে একটি চরের নাম হয় ‘যাদুর চর’। ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার সময় হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির লক্ষ্যে হত্যাযজ্ঞের বীভৎসতার ছবি তুলে বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করেছিলেন। ফলে ব্রিটিশ সরকার তাকে গ্রেফতার করে। দিল্লিতে তার বিচার অনুষ্ঠিত হয়। তার যুক্তির কাছে সরকার পরাজিত হয়ে বিশেষ স্কোয়াড দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়। তার প্রচেষ্টায়ই সেই অঞ্চলে দাঙ্গা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে জেলা বোর্ডের কনিষ্ঠতম চেয়ারম্যান হিসেবে পরপর দু’বার নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের যুব উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। একই সালে মওলানা ভাসানীর আহ্বানে কাগমারী সম্মেলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ১৯৬২ সালে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পার্লামেন্টে বিরোধী দলের উপনেতা ছিলেন। ১৯৬৩ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য গ্রেফতার হন। ষাটের দশকের শেষ দিকে ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক হন এবং আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার দাবি উপস্থাপন করেন। ভাসানীর আহ্বানে জাতীয় পরিষদের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। ১৯৬৯ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের টোবাটেকসিংয়ে কৃষক সম্মেলনে ইয়াহিয়া খানকে গাদ্দার বলার কারণে তাকে গ্রেফতার করে সাত বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পল্টন ময়দানে মওলানা ভাসানীর আহ্বানে অনুষ্ঠিত জনসভায় ন্যাপের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ এবং প্রতীকী পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৭৪ সালে গ্রেফতার ও ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে তিনি কারামুক্ত হন। ১৯৭৬ সালে ভাসানীর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চের প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ভাসানীর মৃত্যুর পর ন্যাপের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

প্রতিটি সমাজ তার ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই জন্ম দেয় শ্রেষ্ট সন্তানদের। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের তেমনই এক শ্রেষ্ঠ সন্তান হচ্ছেন যাদু মিয়া। যে কোন ধরনের সমস্যা নিজের হাতে নিয়ে তা নিয়ন্ত্রনের জুড়িও ব্যতিক্রম। কোথায় কী বলতে হবে, কতটুকু বলতে হবে-সবই যেন ছিল তাঁর নিক্তিতে মাপা। সব কিছু মিলিয়েই যাদু মিয়া অপ্রতিদ্ধন্দী, অদ্বিতীয় ছিলেন। ব্যক্তি যাদু মিয়া এবং নেতা যাদু মিয়ার পার্থক্য খুঁজে পাওয়া বড়ই কষ্টের।

কথা বলতেন মেপে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বলতেন না। আর যা বলতেন গুছিয়ে বলতেন। তাঁর কথার ভিতর যেন যাদুর স্পর্শ ছিল। অসামান্য ছিল তাঁর ব্যক্তিত্ব। তাই বলে তিনি ‘অতিমানব’ ছিলেন না। রাজনৈতিক ক্যারিশমা কিংবা কর্মদক্ষতাই তাঁকে কিংবদন্তী করে তুলেছিল সারা দেশে। ইতিহাস কিংবা ইতিহাসের প্রেক্ষাপট আবর্তিত হয় যে কোন দেশের সমাজ-সংস্কৃতি ও জাতীয় চেতনার নিরিখেই। যে কোন দেশের কোন ব্যক্তি একজন মহান রাজনীতিবিদ হয়ে যান তাঁরই দেশের ইতিহাস কিংবা ঐতিহাসিকতার কারণে।

ইতিহাসের কারনেই কোন ব্যক্তি ইতিহাসের কালপরিক্রমায় একটি জাতিকে দান করেন অমিয় শক্তি, তাঁর সাহসিকতা, ত্যাগ, মনোবল, নীতি-নৈতিকতা এবং আদর্শিকতায় ঘুমন্ত জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জেগে ওঠে আকস্মাৎ। জাতি হয়ে ওঠে এক ভিন্নধরনের বিশেষনের অধিকারী। যাদু মিয়া ইতিহাসের তেমনই একজন সাহসী নেতৃত্ব।

যাদু মিয়ার মত অসাধারন মানুষটাকে বাদ দিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাস রচনা সম্ভব নয়। আপন মহিমায় মানুষকে ভালোবেসে তিনি হতে পেরেছেন এত বড় মানুষ। এত বড় নেতা। তাঁর কাছে মানুষই ছিল এক জাগ্রত শক্তি। মানবিক গুনাবলিতে তিনি ছিলেন গুনান্বিত। তাঁর নিষ্ঠা, সাধনা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট, সহিষ্ণুতা এবং মানবিক গুনাবলী তাঁকে দান করেছে এক অনন্যতা। মানুষের যাবতীয় সৃষ্টি কর্মের মধ্যে রাষ্ট্রই হলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন বিষয়। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব¡ ব্যাতিরেকে অন্যবিধ মানবিক গুনাবলীর উৎকর্ষের কথা চিন্তাও করা যায় না।

গ্রীক দার্শনিক এরিষ্টোটলের মতে -‘যে মানুষ স্বভাবগতভাবেই রাষ্ট্রে বাস করবে না, সে হয়তো পশু নয়তো দেবতা’। আরব দার্শনিক ইবনে খালদুন রাষ্ট্রকে ‘অপ্রয়োজনের প্রয়োজনীয় বস্তুু’ বলে অভিহিত করেছেন।

যাদু মিয়া অনেক কিছু ছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি যে কাজ হাতে তুলে নিয়েছেন তাতেই সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন আবার ব্যর্থতার ছাপও আছে। রাজনীতির যাদুকর বলে খ্যাত যাদু মিয়া পরিচয়ের অন্তরালে অন্যবিধ প্রনিধানযোগ্য বৈশিষ্ট্য সমূহ ঢাকা পড়ে গেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যাদু মিয়া মূখ্যত মেধাবী ও দুরদর্শী রাজনীতিক হিসেবেই সমাধিক পরিচিত। যাদু মিয়া তাঁর রাজনীতি চর্চার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্র চিন্তার বীজটি চারিয়ে তুলেছিলেন। রাজনীতিতে তিনি প্রয়োগ করেছেন একটা অভিনব কৌশল।

আজীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন গণমানুষের মুক্তির জন্য। প্রতিবাদে প্রতিরোধে ও সংগ্রামে তিনি কখনো পিছপা হননি। জীবনের মোহের কাছে তিনি কখনো আত্মসর্ম্পন করেননি। রাজনীতি ক্ষমতার লড়াই। কিন্তু সেই ক্ষমতার লড়াই যখন নিছক ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে পরিনত হয় তখন সেই রাজনীতি মানুষের কোন কল্যাণ সাধন করতে পারে না। যাদু মিয়ার রাজনীতি হলো মানব কল্যানবাদের রাজনীতি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের রাজনীতি।

প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী, বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী, অকুতোভয় অন্তর্ভেদী দৃষ্টি, দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি ও প্রচন্ড আকর্ষনীয় ক্ষমতার অধিকারী এই সিংহ পুরুষটির জীবনে পাওয়ার চেয়ে ত্যাগই করেছেন বেশী। আমাদের দেশে কীর্তিমানদের মূল্যায়ন খুব একটা করতে দেখা যায় না। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমরা সীমাহীন সীমাবদ্ধতার শিকার। আমরা রাজনৈতিক আদর্শগত দ্বন্দ-সংঘাতের চেয়ে ব্যক্তিগত এবং দলীয় কোন্দলে বেশী জড়িয়ে পড়ি।

আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সকল আন্দোলন সংগ্রামেও আমাদের মাঝে নানা বিভেদ পরিলক্ষিত। এ বিভেদ ছিলো মত ও পথের। এত সব মতপার্থক্যের মাঝে দেশ এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের যে ক’জন ক্ষনজন্মা রাজনীতিক ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন তাঁদের মধ্যে একজন হচ্ছেন মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া।

১৯৭৫ পরবর্তী পরিস্থিতির প্রয়োজনেই যাদু মিয়া জিয়াউর রহমানের সাথে আলোচনা শুরু করেন। আলোচনার উদ্দেশ্য ছিলো সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরন। সেদিন তিনি একাজে এগিয়ে এসেছিলেন শান্তিপূর্ন উপায়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা প্রবর্তনের লক্ষ্যে। যাকে তিনি ‘গণতন্ত্রে উত্তরনের প্রক্রিয়া’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রথমে ফ্রন্ট পরে বিএনপি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। তিনি সেদিন উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন নিজ হাতে গড়া প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে। বোধহয় তাঁর মধ্যে একটা সন্দেহ ছিল। ত্যাগ করলেন ব্যক্তিগতভাবে তাঁর নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াস।

১৯৭৯ সালের ১৮-ই ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি’র নিরঙ্কুশ বিজয়ের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল অসাধারণ। নির্বাচনের আগে বিএনপি’র পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য তিনি দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়ান। এতটুকু ক্লান্তি বা বিরক্তিবোধ করেননি। দুঃখের বিষয় নির্বাচনে বিএনপি যখন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জয় লাভ করলো এবং তিনি যখন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচাইতে বড় সাফল্যের দ্বার প্রান্তে এসে উপনিত হলেন ঠিক সেই মুহুর্তে ১৯৭৯ সালের ১২ই মার্চ মত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ মৃত্যু অত্যন্ত মর্মান্তিক। অনেক প্রশ্নও রয়েছে এ মৃত্যু নিয়ে। যে সকল প্রশ্নের মিমাংসা আজও হয় নাই।

নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ন্যায্যতা থাকার পরও হয়তো কোন ষড়যন্ত্রের কারণে সেই পদে তিনি আসীন হতে পারেননি। ষড়যন্ত্র ছিল গণতন্ত্র উত্তরণের বিরুদ্ধে যা আজও বেশ মাত্রায় বিরাজমান। তাই বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করারও অপপ্রয়াস আজও চলছে। আজও প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয় নাই প্রগতিশীল শক্তির জাতীয় ঐক্য। প্রধানমন্ত্রীর পদ মর্যাদায় তিনি সিনিয়র মন্ত্রী হলেন তাও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত সাফল্যের সাথে শান্তিপূর্ণ ভাবে এগিয়ে নেয়ার স্বার্থে। যাদু মিয়ার এ ধরনের ভূমিকাকে নিঃসন্দেহে চরম আত্মত্যাগ বলে উল্লেখ করলে বোধ হয় অত্যুক্তি হবেনা। আত্মত্যাগের মাধ্যমেই তিনি সমগ্র জাতির কাছে আজ হিরন্ময় উদ্ভাসিত।

বাম-ডান সকলের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিলো খুবই ভালো। তাঁর উদার সহযোগীতা পাননি এমন একজন বন্ধুও তা কখনো অস্বীকার করেন নি। তাঁর হৃদয় ছিলো বিস্তীর্ণ নীলিমার মতো। পারিবারিক সামন্ত ট্র্যাডিশন থেকে বেরিয়ে আসা এই আধুনিক মানসিকতার মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন অনাড়ম্বর, অতিব সাধারন। খুব সহজেই মিশে যেতেন যেকোন পরিবেশে। তবে কখনো বিসর্জন দেননি তাঁর আত্ম সম্মান বোধ।

আজ জন্মশতবার্ষিকীতেও নীলফামারীর ডিমলার খগাখড়িবাড়ির জোদ্দার পুত্র রাজনীতির কিংবদন্তী যাদু মিয়ার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনযাত্রা নিয়ে আমাদের কৌতুহল এক বিন্দুও কমেনি, বরং বেড়েছে। কেননা তাঁর রাজনীতি নিয়ে আলোচনা যতটা হয়েছে মানুষ যাদু মিয়া সম্পর্কে আলোকপাত তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এক সময় রুচিশীল রাজনীতিকরা তাঁর সান্নিধ্য ও রসালাপ শোনার জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করে থাকতেন। তারাও আজ হয়তো যাদু মিয়াকে ভুলে গেছেন। হয়তো এটাই স্বাভাবিক! যাদু মিয়ার জীবনের কথা বলার উত্তরসূরির অভাব আমাদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়।

 লেখকঃ এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া


ক্যাটেগরি: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কৃতি সন্তান ট্যাগ: জাতীয়

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

লিংক কপি হয়েছে!

অন্যান্য খবর

"চোখের মতো গাঢ় বিষন্নতা" — খাজিনা খাজি
"চোখের মতো গাঢ় বিষন্নতা" — খাজিনা খাজি

তোমার চোখের তলে যে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে,তা কেবল রাত নয়—তা এক শোকস্নাত উপাখ্যান,যেখানে ভালোবাসা জন্ম নেয়...

আশুরা অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সাহস ও সত্যের পথ দেখায়: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
আশুরা অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সাহস ও সত্যের পথ দেখায়: প্রধ...

ঢাকা প্রতিনিধি: প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বি...

নাসিরনগরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত, আহত ১৫ চাতলপাড়ে উল্টা ও মোল্লা গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বে উত্তাল এলাকা
নাসিরনগরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত, আহত ১৫ চাতলপা...

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে দীর্ঘদিনের গোষ্ঠীগত বিরোধ ও আধিপত্য...

চাঁদপুরে কচুর লতি তুলতে গিয়ে সাপের কামড়ে বৃদ্ধার মৃত্যু বর্ষায় সাপের উপদ্রব, বাড়ছে আতঙ্ক ও সচেতনতার দাবি
চাঁদপুরে কচুর লতি তুলতে গিয়ে সাপের কামড়ে বৃদ্ধার মৃত্যু বর্ষ...

চাঁদপুর প্রতিনিধি: চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়নে কচুর লতি তুলতে গিয়ে সাপের কামড়ে এক বৃদ্ধা...

‘মেঘ যতই ঘন হোক, সূর্যকে আটকানো যাবে না’ কুমিল্লায় জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানের হুঁশিয়ারি— ‘‘যেন-তেন নির্বাচন চাই না’’
‘মেঘ যতই ঘন হোক, সূর্যকে আটকানো যাবে না’ কুমিল্লায় জামায়াত আ...

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেমে আসা কালো মেঘের প্রতীকী ব্যাখ্যা দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমা...

চৌদ্দগ্রামে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় নিহত ২, আহত চালক পলাতক
চৌদ্দগ্রামে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় নিহত ২, আহত চালক...

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় পড়ে দুই স্বজন নিহত...

কুমিল্লায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা দাবিতে সরব মনিরুল হক চৌধুরী, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টার কাছে চিঠি
কুমিল্লায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা দাবিতে সরব মনিরুল হক চৌধুরী...

প্রবাসী আয় নির্ভর ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ কুমিল্লায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ শাখা স্থাপনের দাবি জা...

মুরাদনগরে মা-ছেলে-মেয়ে হত্যা: রাজধানী থেকে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার ৬
মুরাদনগরে মা-ছেলে-মেয়ে হত্যা: রাজধানী থেকে র‌্যাবের অভিযানে...

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মা, ছেলে ও মেয়েকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় রাজধানীর বন...

চান্দিনা প্রেস ক্লাব নির্বাচন সম্পন্ন: সভাপতি রণবীর, সম্পাদক মাসুদ
চান্দিনা প্রেস ক্লাব নির্বাচন সম্পন্ন: সভাপতি রণবীর, সম্পাদক...

কুমিল্লার চান্দিনা প্রেস ক্লাবের নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (৫ জুলাই)...

রোটারেক্ট ক্লাব লালমাইয়ের ৫২৯তম মিটিং ও নতুন রোটা বর্ষের সূচনা: প্রথম নারী সভাপতির নেতৃত্বে প্রাণবন্ত আয়োজন
রোটারেক্ট ক্লাব লালমাইয়ের ৫২৯তম মিটিং ও নতুন রোটা বর্ষের সূচ...

 শনিবার (৫ জুলাই ২০২৫) বিকেলে রোটারেক্ট ক্লাব অব লালমাইয়ের ৫২৯তম সাধারণ সভা ও ২০২৫-২৬ রোটা বর্ষ...

বরুড়ায় কাদবা তলাগ্রাম তারিণী চরন লাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে উদ্বোধনী র‍্যালি অনুষ্ঠিত
বরুড়ায় কাদবা তলাগ্রাম তারিণী চরন লাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্...

মোঃ শরীফ উদ্দিন।।কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কাদবা তলাগ্রাম তারিনী চরন লাহা উচ্চ বি...

লাকসামে রথযাত্রার দিন করুণ দুর্ঘটনা: রথের নিচে পড়ে ১০ বছরের শিশুর মৃত্যু
লাকসামে রথযাত্রার দিন করুণ দুর্ঘটনা: রথের নিচে পড়ে ১০ বছরের...

লাকসাম প্রতিনিধি: কুমিল্লার লাকসামে ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসবের ফেরার দিনে হৃদয়বিদারক...

সময়
আজকের তারিখ
ইংরেজি তারিখ বাংলা সন
প্রিন্ট নিউজ
...
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
➤ আশুরা অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সাহস ও সত্যের পথ দেখায়: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
➤ নাসিরনগরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত, আহত ১৫ চাতলপাড়ে উল্টা ও মোল্লা গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বে উত্তাল এলাকা
➤ চাঁদপুরে কচুর লতি তুলতে গিয়ে সাপের কামড়ে বৃদ্ধার মৃত্যু বর্ষায় সাপের উপদ্রব, বাড়ছে আতঙ্ক ও সচেতনতার দাবি
➤ ‘মেঘ যতই ঘন হোক, সূর্যকে আটকানো যাবে না’ কুমিল্লায় জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানের হুঁশিয়ারি— ‘‘যেন-তেন নির্বাচন চাই না’’
➤ চৌদ্দগ্রামে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় নিহত ২, আহত চালক পলাতক
➤ কুমিল্লায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা দাবিতে সরব মনিরুল হক চৌধুরী, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টার কাছে চিঠি
➤ মুরাদনগরে মা-ছেলে-মেয়ে হত্যা: রাজধানী থেকে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার ৬
➤ চান্দিনা প্রেস ক্লাব নির্বাচন সম্পন্ন: সভাপতি রণবীর, সম্পাদক মাসুদ
➤ ১০১তম জন্মবার্ষিকী গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি যাদু মিয়া তোমায়
➤ রোটারেক্ট ক্লাব লালমাইয়ের ৫২৯তম মিটিং ও নতুন রোটা বর্ষের সূচনা: প্রথম নারী সভাপতির নেতৃত্বে প্রাণবন্ত আয়োজন
➤ বরুড়ায় কাদবা তলাগ্রাম তারিণী চরন লাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে উদ্বোধনী র‍্যালি অনুষ্ঠিত
➤ লাকসামে রথযাত্রার দিন করুণ দুর্ঘটনা: রথের নিচে পড়ে ১০ বছরের শিশুর মৃত্যু
➤ জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে: এখনই চাই সমন্বিত ও কঠোর পদক্ষেপ
➤ আশুরা: ত্যাগ ও শোকের মহিমান্বিত দিন
➤ বাংলাদেশ-জাপান অংশীদারত্ব জোরদারে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
➤ সতর্ক সংকেতে ৮ জেলা, ৪ সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা জারি
➤ চলতি মাসের ১৩ জুলাইয়ের পর প্রকাশিত হবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল, অপেক্ষায় ১৯ লাখ শিক্ষার্থী
➤ মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তকে ভুল সংশোধনে উদ্যোগ, শিক্ষকদের প্রস্তাব চেয়েছে ঢাকা বোর্ড
➤ কুমিল্লার মুরাদনগরে এগিয়ে আসেনি কেউ, কবর খুঁড়ছে গ্রাম পুলিশ
➤ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ: তদন্তে চার সদস্যের কমিটি, অভিযুক্তদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ
গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কসমূহ
Logo
সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি ; বি এম মালেক রিপন, সম্পাদক ও প্রকাশক ; নয়ন দেওয়ানজী, সহকারী সম্পাদক ; মাইনুল আরেফিন তমাল, ইব্রাহিম খলিল, তৌহিদ হোসেন সরকার, আইটি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দিন। হীরা ম্যানশন রামঘাট, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত এবং কালার প্লাস অফসেট প্রেস কুমিল্লা থেকে মুদ্রিত।বার্তা, বাণিজ্যিক ও সম্পাদকীয় কার্যালয় :নূরজাহান ভিউ,অতীন্দ্র মোহন রায় সড়ক, কুমিল্লা।মোবাইল:০১৬৭৫ ৯৬৪ ৩৬৪,ইমেইল swadeshjournal@gmail.com
© 2025 Swadesh Journal. All rights reserved.
Design & Developed by: alauddinsir