
প্রতিবেদক: Nayan Dewanji | ক্যাটেগরি: ধর্ম | প্রকাশ: 4 Jul 2025, 11:07 PM



"উঠো, জাগো, এবং লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত থেমো না!"
এই মন্ত্র শুধু একটি বক্তব্য নয়, এটি ছিল একজন জাতির নির্মাতা, দার্শনিক, আধ্যাত্মিক পুরুষ এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবীর অগ্নিমন্ত্র—স্বামী বিবেকানন্দের।
আজ, ৪ঠা জুলাই ২০২৫, তাঁর ১২৩তম প্রয়াণ দিবস। এই দিনে আমরা স্মরণ করি এমন একজন মানুষকে, যিনি হিন্দুধর্মকে আধুনিক যুগে নতুন আলোকময় ব্যাখ্যার মাধ্যমে পুনরুদ্বার করেছিলেন, যিনি বলেছিলেন—“দরিদ্র, নিপীড়িত, উপেক্ষিতরাই প্রকৃত নারায়ণ।”
শিমুলিয়ার নরেন থেকে বিশ্বমঞ্চের বিবেকানন্দ
১৮৬৩ সালে উত্তর কলকাতার শিমুলিয়া গ্রামে জন্ম নেয়া নরেন্দ্রনাথ দত্ত অল্প বয়সেই দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসার এক অনন্য মেলবন্ধনে পরিণত হন। তিনি শুধু জ্ঞান অন্বেষণেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে আধ্যাত্মিকতাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে চেয়েছিলেন। সেই প্রশ্ন তাঁকে পৌঁছে দেয় দক্ষিণেশ্বরের দরিদ্র ব্রাহ্মণ রামকৃষ্ণ পরমহংসের কাছে। বাকিটা ইতিহাস।
রামকৃষ্ণের পরম শিষ্য হিসেবে বিবেকানন্দ হয়ে ওঠেন হিন্দুধর্মের এক নবজাগরণ পুরুষ, যিনি পশ্চিমা জগতের সামনে তুলে ধরেন ভারতীয় দর্শনের সর্বোৎকৃষ্ট মর্মবাণী—"তুমি ঈশ্বর, তোমার মধ্যে সব শক্তি আছে, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখো।"
শিকাগো সম্মেলন: এক ভাষণে বদলে গেলো ইতিহাস
১৮৯৩ সালে শিকাগোতে বিশ্বধর্ম সম্মেলনে তাঁর ঐতিহাসিক “Sisters and Brothers of America” বক্তব্য আজও পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী ভাষণ হিসেবে বিবেচিত। কয়েক মিনিটেই তিনি পশ্চিমা বিশ্বের মঞ্চে এক অনন্য পরিচয় ছাপ ফেলেন, যেখানে ভারত আর শুধুই দরিদ্র ও রহস্যময় জাতি নয়, বরং গভীর আধ্যাত্মিকতায় উদ্ভাসিত এক সভ্যতা।
বেলুর মঠ: কর্ম, জ্ঞান, প্রেম ও ধ্যানের চার পিলার
১৮৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রামকৃষ্ণ মিশন—যা আজও মানবসেবার এক অনন্য প্রতীক। বেলুর মঠকে তিনি গড়ে তোলেন এক সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে, যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্য সেবা ও শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত।
বোমার মতো জাগরণ: যুবকদের জন্য তাঁর আহ্বান
তিনি বলেছিলেন:
"Give me few men who are pure and selfless and I shall shake the world!"
তাঁর এ আহ্বানে ভারতবর্ষের যুবসমাজ বিদ্রোহের অনুপ্রেরণা খুঁজে পেয়েছিল। ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গের পর বিপ্লবীরা তাঁর বাণীকেই ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিল।
বিশ্বাস, যুক্তি ও সাহসের সম্মিলন
বিবেকানন্দ ছিলেন না কেবল একজন আধ্যাত্মিক গুরু; তিনি ছিলেন যুক্তিবাদী, বাস্তববাদী, সমালোচনাশীল এবং বিশুদ্ধ মানবতাবাদী। তিনি হিন্দু পুনর্জাগরণবাদীদের অন্ধ অতীতচর্চার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মান্তর প্রচারণার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন এবং মুসলিম ঐতিহ্যকে দিয়েছিলেন যথার্থ সম্মান।
পরিণতিতে এক দীপ্ত অথচ সংক্ষিপ্ত জীবন
১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই মাত্র ৩৯ বছর বয়সে, তিনি আত্মসামাধি নেন বেলুর মঠে। এমন এক জীবন, যেখানে প্রতিটি নিঃশ্বাসে ছিল জাতিকে জাগিয়ে তোলার আগুন।
প্রয়াণ দিবসে প্রাসঙ্গিকতা
আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে প্রশ্ন ওঠে—বিবেকানন্দ আজ থাকলে কী করতেন? হয়তো বলতেন, “তোমরা নিজের শক্তি চিনো, নিজের দেশকে ভালোবাসো, আর মানুষের সেবা করো—সেটাই হলো প্রকৃত ধর্ম।” তাঁর দর্শন আজও প্রাসঙ্গিক, যখন জাতি আবার আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে, এবং আত্মশক্তিতে দাঁড়ানোর স্বপ্নে বিভোর।
আগুন জ্বলার জন্যই, নিভে যাওয়ার জন্য নয়
স্বামী বিবেকানন্দ চলে গেছেন ১২৩ বছর আগে। কিন্তু তাঁর চিন্তা, তাঁর শক্তি, তাঁর প্রেম, তাঁর বিদ্রোহ আজও আমাদের বাতিঘর হয়ে আছে। তাঁর জন্ম যেমন এক বিপ্লব ছিল, তেমনই তাঁর মৃত্যুও এক অনন্ত আলো হয়ে রয়ে গেছে—যা ভবিষ্যতের পথ দেখায়।
এই প্রয়াণ দিবসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি—
লেখকঃনয়ন দেওয়ানজী
প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক
বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পর্ষদ,কুমিল্লা
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর

আশুরা: ত্যাগ ও শোকের মহিমান্বিত দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক।।প্রতিবছর ১০ মহররম সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় ধর্মীয় শ্রদ্ধা ও ভাবগম্ভীর পরিবে...

বাংলাদেশ-জাপান অংশীদারত্ব জোরদারে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগ, মৎস্য, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা ও যুব উন্নয়...

সতর্ক সংকেতে ৮ জেলা, ৪ সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা জারি
দেশের উপকূলীয় ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হা...

চলতি মাসের ১৩ জুলাইয়ের পর প্রকাশিত হবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষ...
নিজস্ব প্রতিবেদকচলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য অ...

মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তকে ভুল সংশোধনে উদ্যোগ, শিক্ষকদের প্রস্তাব...
নিজস্ব প্রতিবেদক।।ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে চিহ্নিত ভুল ও ত্রুটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে...

কুমিল্লার মুরাদনগরে এগিয়ে আসেনি কেউ, কবর খুঁড়ছে গ্রাম পুলিশ
কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়ি গ্রামে গণপিটুনিতে নিহত মা রোকসানা বেগম রুবি ও তার দুই সন্তান রাসেল ও জো...
